রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়নপুরে একটি চুরির মামলায় আসামী গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। অজ্ঞাতনামা এই মামলায় ইতিমধ্যে ৬ জন আটক হলেও সন্দেহের তালিকায় আছে আরো ১০/১২ জন। আটককৃতদের মধ্যে আনিচ নামের একজন ওই রাতে রোগী নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত থাকলেও তাকে গ্রেফতার করায় এই বিতর্কের জন্ম নেয়। তবে পুলিশ বলছে কোন নিরীহ মানুষকে হয়রাণী করা হবে না।
পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গত ৬ জুলাই একই রাতে আট বসতঘরে চুরি সংঘটিত হয়েছে। ওই ৮টি ঘর থেকেই সংঘবদ্ধ চোরচক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে স্বর্নালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। এদিকে ৮ জুলাই উজিরপুর মডেল থানায় পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের শাহিন খান নামে ভুক্তভোগী এক বাসিন্দা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি চুরি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার পরপরই উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়ন ক্যাম্পের এএসআই মনিরুল ইসলাম পূর্ব নারায়নপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে চুরির সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় মোক্তার হাওলাদারের ছেলে প্রিন্স হাওলাদারকে (৩০) গ্রেফতার করে। তার দাবী, গ্রেফতারকৃত প্রিন্সের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই এলাকা থেকে আরও চারজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- তুফান সরদার (২০), সফিক মিয়া (১৯), রতন গাইন (৩০), মোস্তফা সরদারের ছেলে আজাদ সরদার (২২)। পরবর্তীতে এ ঘটনায় খুলনা থেকে আলতাফ নামের একজনকে আটক করা হয় এবং আলতাফের স্বিকারোক্তি অনুযায়ী ১৭ জুলাই রাত আনুমানিক ২টার দিকে নারায়নপুরের বাসিন্দা মৃত আমির ডাকুয়ার ছেলে আনিচ ডাকুয়া (৪৫) কে আটক করা হয়। আকটকৃত আনিচকে ১৮ জুলাই আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আনিচের স্ত্রী কানন বেগম সাংবাদিকদের জানান, আনিচ পেশায় একজন ভ্যানচালক ও দিনমজুর। ১৬ জুলাই নারায়নপুর-দাসেরহাট সড়কের দুই পার্শ্বের ঝোপঝাড় পরিস্কারের উদ্যোগ নেয় গুঠিয়া পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই মনির। তিনি আনিচসহ ২০/২৫ জন রিক্সা ও ভ্যানচালককে দিয়ে ওই কাজ সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে মূল সড়কের উভয় পার্শ্বের ঝোপঝাড় পরিস্কারের জন্য আনিচকে প্রেসার দেন এএসআই মনির। তিনি তাতে রাজী না হওয়ায় ওই পুলিশের সাথে আনিচের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই আনিচকে চুরি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে দাবী করেন কানন বেগম। বরং চুরির রাতে আনিচ তার ভ্যানে করে পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা অসুস্থ হবির খান ও তার মেয়েকে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। যেখানে তিনি সারারাত অতিবাহিত করেন বলে দাবী করেন কানন বেগম।
কিন্তু এএসআই মনির জানান, আটককৃত আলতাফ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে চুরির সময় আনিচ তাদের সাথে ছিল। সেই মোতাবেকই আনিচকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর স্বতঃষ্ফূর্ত অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সেখানে আনিচের সাথে কোন দ্বন্দের প্রশ্নই আসেনা।
অন্যদিকে এ বিষয় জানতে চাইলে হবির খান মুঠোফোনে জানান, চুরির ঘটনার দিন ৬ জুলাই রাত ১২টার দিকে তার বাড়িতে কে বা কাহারা চেতনানাশক দ্রব্য স্প্রে করে পেছনের দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় তার ছেলে টের পেয়ে ডাক-চিৎকার করলে চোরেরা পালিয়ে যায়। তবে চোর চক্রটির চেতনানাশক স্প্রে’র কারনে তিনি ও তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
উপায়ন্তু না পেয়ে প্রতিবেশী ভ্যান চালক আনিচ ডাকুয়াকে ডেকে এনে তার ভ্যানে করে তাদের বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাত ২টার দিকে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে আনিচ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে তার ভ্যান নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার হেটে আনিচ ভোর বেলা বাড়িতে পৌছায়। হবির খান দাবী করেন, যেহেতু সারারাতই আনিচ আমাদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাই তার পক্ষে কোনভাবেই এ চুরির কাজে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না।
এদিকে আটককৃত প্রিন্সের বাবা মোক্তার হোসেন তার ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে জানান, স্থানীয় বিরোধের জের ধরে তার ছেলেকে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারের পর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে এএসআই তার ছেলের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের ফলে গ্রেফতারের পর তার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে বলে দাবী করেন মোকতার হোসেন। এর প্রতিবাদ করায় তাকেও বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান। থানা পুলিশের কাছ থেকে ন্যায় বিচার না পাওয়ার শংকা জানিয়ে ইতিমধ্যে মোকতার হোসেন মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে স্থানান্তরের দাবী জানিয়ে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন।
তবে তার এ অভিযোগ অস্বীকার করেন এএসআই মনির। প্রিন্সকে আটকের পর কোন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবী করেন তিনি। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আটককৃতরা ছাড়াও এই চুরির সাথে আরো ১০/১২ জন জড়িত রয়েছে। তাদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল মুঠোফোনে জানিয়েছেন, চুরির ঘটনাগুলোতে একজন ভুক্তভোগী অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করলে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আটককৃত অন্যান্যদের থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply